শনিবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৭

শ্রীল হরিদাস ঠাকুরের জন্মভূমি শ্রীধাম কেঁড়াগাছী

নামাচার্য্য হরিদাস ঠাকুর শ্রীচৈতন্য মহাপ্ৰভুর খুবই অনুরক্ত ছিলেন। আদৰ্শ এক ভক্ত তিনি প্ৰত্যহ তিনলক্ষ হরিনাম জপ করতেন। তাই মহাপ্রভুর অতি প্রিয়ভক্ত শ্রীরুপ ও সনাতন পুরীতে এলে হরিদাসের সঙ্গে থাকা পছন্দ করতেন কারণ তাঁর কুটীর ছিল বেশ নিৰ্জন স্থানে। হরিদাস ঠাকুরের সময় কাটত হরিনামে না হয় ভগবৎ - কথা আলোচনায়। বৃথা কথায় তিনি কখনও নিজ জিহ্বা ব্যবহার করতেন না। সকল ভক্তের হরি দাসের উপর গভীর শ্ৰদ্ধা ছিল। মহাপ্ৰভু প্ৰতিদিন সকালে জগন্নাথ দৰ্শনের পর সোজা চলে আসতেন হরিদাসের কুটীরে এবং কিছু সময় কৃষ্ণ - কথায় কাটাবার পর নিজ বাসায় ফিরে যেতেন ।

গোবিন্দকে দিয়ে তিনি রোজ হরিদাসের জন্য মহাপ্ৰসাদ পাঠিয়ে দিতেন। একদিন গোবিন্দ প্ৰসাদ নিয়ে এসে দেখেন হরিদাস তখনও বিছানায় শুয়ে আছেন ও খুব ক্ষীণস্বরে হরিনাম জপ করে যাচ্ছেন। গোবিন্দ বুঝলেন হরিদাসের শরীর সুস্থ নয়। হরিদাস মাত্ৰ এককণা নিয়ে মহাপ্ৰসাদ সন্মান করলেন। গোবিন্দ মহাপ্রভুকে সব বললেন। হরিদাসের এই অবস্থা জানাবার পর মহাপ্ৰভু তাড়াতাড়ি ছুটে এসে হরিদাসের স্বাস্থ্য সমন্ধে জিজ্ঞাসা করাতে, হরিদাস উত্তর দিলেন , ‘'প্ৰভু , দৈহিকভাবে আমি তত অসুস্থ নই , তবে অন্তরে খুব হতাশা অনুভব করছি কেননা আমার দৈনিক লক্ষ্য যে তিনলক্ষ হরিনাম গ্ৰহণ , সে সংখ্যা পূৰ্ণ করতে - পারছি না ? ’ মহাপ্ৰভু বল্লেন , “ ওহে প্রিয় হরিদাস, তুমি তো - একজন পরমভাগবত ভক্ত । তুমি তো সাধনায় সিদ্ধি লাভ করেছ ।

 তুমি তো হরিভজনের দৃষ্টান্তস্বরুপ । হরিনামের মহিমা তো তুমি জগতে প্রচার করেছ । সুতরাং এই অবস্থায়  পৌঁছিয়ে তুমি হরিনামের সংখ্যা রাখতে পােরছ কিনা সে বিষয়ে তো দুঃখ করার কিছু নাই'’। উত্তরে হরিদাস স্বভাব-সুলভ দৈন্য সহকারে বললেন , “ আমি আপনার অযোগ্যতম শিষ্য,আমার একটা বহুদিনের আকাঙ্খিত বাসনা আছে,যদি আপনি কৃপা করে তা ’পূরণ করবেন কথা দেন তবে বলতে পারি''। মহাপ্রভু বললেন,হে ঠাকুর হরিদাস আপনি বলুন,আমি অবশ্যই আপনার মনোবাঞ্ছা পুর্ন করব''। কেঁদে কেঁদে হরিদাস ঠাকুর বললেন, ''হে স্বাতন্ত্র্য ঈশ্বর,হে আমার প্রভু,আমি যেন আপনার চরণ - পদযুগল বক্ষে জড়িয়ে ধরে,আপনার শ্ৰীমুখচন্দ্ৰ দৰ্শন করতে করতে , আপনার নামকীৰ্ত্তন করতে করতে আমার মৃত্যু হয় ।

কারণ আমি জানতে পেরেছি খুব শীঘ্ৰই আপনি লীলা সংবরণ করবেন। আপনার সঙ্গে বিচ্ছেদ আমার পক্ষে অসহ্য হবে। অতএব এই বর আমাকে দিন যেন আপনার অন্তধার্ন আমাকে দৰ্শন না করতে হয়''। মহাপ্ৰভু শুধু মৃদু হাস্য করে চলে গেলেন। সর্বজ্ঞ মহাপ্ৰভু পরদিন সকালে শ্ৰীদামোদর স্বরুপ,রায় রামানন্দ,সার্বভৌম ভট্টাচাৰ্য্য ও অন্যান্য অনুরুপ কিছু অন্তরঙ্গ ভক্ত সঙ্গে হরিদাসের কুটীরে এলেন ও সংকীৰ্ত্তন শুরু করলেন ; হরিদাসের ইচ্ছানুসারে তিনি ধ্যানমগ্নচিত্তে মহাপ্ৰভুর চরণ দুটি বুকে আকড়ে ধরে নয়নদ্বয়ের স্থির দৃষ্টি মহাপ্ৰভুর দেহের উপর নিবদ্ধ রেখে,ঠিক যেন দুইটি ভৃঙ্গ মধুপান মত্ত, আহা!! শ্ৰীকৃষ্ণনাম কীৰ্ত্তন করতে করতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন ।

আহা!! কী গৌরবোজ্জ্বল প্ৰস্থান,পুরাকালের ভীষ্মের নিৰ্য্যাণ স্মৃতি জাগরিত করে সমবেত ভক্তমণ্ডলী ও মহাপ্রভুর উচ্চ সংকীৰ্ত্তন প্ৰতি আনাচে কানাচে পূৰ্ণ হল। সবাই চোখের জলে বুক ভাসিয়ে কীর্ত্তন ও নৃত্য করতে লাগলেন। সবাই ধ্বনি দিতে লাগলেন, জয় হরিদাসের জয়, জয় মহাপ্রভুর জয়। মহাপ্ৰভু ও স্বরুপ দামোদর সহ অন্যান্য ভক্তবৃন্দ হরিদাস ঠাকুরের দেহটিকে তুলে নিয়ে এক সুসজিত খট্টায় স্থাপন করলেন ও বহন করে সমুদ্রতীরে নিয়ে গেলেন সেখানে সেই দেহটিকে সমুদ্ৰ স্নান করাইয়া কিছু ক্ৰিয়াকলাপের পর সমুদ্রতীরে একটা গৰ্ত্ত রচনা করিয়ে তার মধ্যে স্থাপন করা হল , তারপর দেহটিকে নুতন বস্ত্ৰ,পুস্প - চন্দন দ্বারা - সজ্জিত করে ও জগন্নাথ মন্দিরের কিছু পবিত্ৰ সূত্ৰ স্থাপন করে , মহাপ্ৰসাদ অৰ্পণ করা হল ।

তারপর মহাপ্ৰভু স্বহস্তে তার উপর বালুকা দিলেন , অন্যান্যেরাও তাই করলেন হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন করার মধ্য দিয়ে এবং একটি সমাধিস্তম্ভ রচনা করা হল।
( ঐ স্থানটি পুরীর স্বৰ্গদ্ধারের নিকট হরিদাস সমাধি নামে খ্যাত এক সমাধি মন্দির নিৰ্মিত হয়েছে )
এরপর মহাপ্ৰভু ভক্তগণসহ সমুদ্ৰ স্নান করলেন ও সোজা জগন্নাথ মন্দিরে গিয়ে আনন্দবাজারে স্বয়ং নিজের উত্তরি ধরে দোকানে দোকানে মহাপ্ৰসাদ,
ও সিংহদ্বারের উঁচু সিড়িতে দাড়িয়ে হরিনাম করতে করতে কেঁদে কেঁদে ভিক্ষা করতে লাগলেন - হরিদাস ঠাকুরের নিৰ্য্যাণ উপলক্ষে উৎসবের জন্য। পুরীধামবাসী হরিদাসের মাহাত্ম্য জানতেন তারা দলে দলে এসে মহাপ্রভুর সাথে একাত্ত্ব হয়েছিল।

মহাপ্রভু ও ভক্তগনের উদ্যোগে হরিদাস ঠাকুরের বিরাট নির্য্যান স্মরন অনুষ্ঠান হয়েছিল। লক্ষ লক্ষ নারী পুরুষ যোগদান করেছিল। মহাপ্ৰসাদ সকল ভক্তগণের মধ্যে বিতরণ করার পর মহাপ্ৰভু খুব ভারাক্ৰান্ত হৃদয়ে নিজ বাসায় ফিরে এলেন । এই হরিদাস ছিলেন তাঁর নিত্য সঙ্গী, নিজ ভাবনা প্ৰকাশ করে বল্লেন , “ কৃষ্ণের কৃপায় , তাঁর সঙ্গে আমার মধুর ও সাময়িক সম্বন্ধ ঘটেছিল । কিন্তু আবার তাঁরই ইচ্ছায় আবার সে সঙ্গ থেকে বঞ্চিত হলাম । হরিদাস ছিলেন ভক্ত চূড়ামণি , তাই ধরিত্রীমাতা আজ এক অমূল্য সম্পদ হারালেন”।
 ভক্তগন সকলে হরিদাস ঠাকুরের গৌরবোজ্জ্বল জীবনী  নিয়ে আলোচনা করেন। এখনও পুরীতে হরিদাস ঠাকুরের সমাধি মন্দিরে অখন্ড হরিনাম চলছে,,,,,।

''হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে,
                           হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে''

জয় নামাচার্য্য হরিদাস ঠাকুরের জয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

ভাগবান শ্রী কৃষ্ণের পঞ্চম দোল যাত্রা উপলক্ষে ৩ দিন ব্যাপী অনুষ্ঠান সূচি

🌹ওঁ নমো বাসুদেবায়ঃ ওঁ কৃষ্ণ কৃপাহি কেবলম 🌹 ভাগবান শ্রী কৃষ্ণের পঞ্চম দোল যাত্রায়। ভাগবত আলোচনা, পদাবলী কীর্ত্তন, ভজন কীর্ত্তন ও ভক্ত...